ঢাকা,শুক্রবার, ৩ মে ২০২৪

মামা আসেন; সবুজ-গোলাপী-আরসেভেন সব পাবেন

তুষার তুহিন, কক্সবাজার :
মামা, আসেন, নিয়া যান। কি লাগবে বলেন, সবই আছে। সবুজ, গোলাপী,আরসেভেন সব ধরনের বাবা পাবেন। এভাবে সুর করেই বাজারঘাটার পৌরসভা মার্কেট সংলগ্ন রাখাইন পাড়ার রাস্তায় দাড়িয়ে ক্রেতাদের ডেকে চলেছেন তাঁরা। নিয়মিত দিনরাত ২৪ ঘন্টা পালাক্রমে রাস্তার ধারে, চায়ের দোকানে বসে ক্রেতাদের দৃষ্টি আর্কষনের চেষ্টা করে ২০/২৫ ইয়াবা বিক্রেতা। অপরিচিত মুখ, উঠতি তরুন ও যুবকদের দেখলে তাদের হাকডাক আরো বেড়ে যায়।
বুধবার বিকেল শহরের বড়বাজারের পূর্ব রাখাইনপাড়ার গিয়ে এই দৃশ্য দেখা যায়। গলির মুখে দাড়িয়ে রয়েছে মধ্যবয়সী এক লোক। হাত ও লুঙ্গির ভাজে কোমরে পলিথিনে মোড়ানো ইয়াবা। একের পর এক যুবক আসছে। তার হাতের মধ্যে টাকা গুজে দিচ্ছে। আর ছোট পলিখিনের মোড়ানো প্যাকেটটি নিয়ে হাওয়া হয়ে যাচ্ছে।
এই সময় এক চায়ের দোকানদারের সাথে কথা বলে জানা যায়, মধ্যবয়সী ওই লোকটির নাম জব্বার। সে নিজেই ইয়াবাসেবী। এভাবে খুচরা ইয়াবা বিক্রি করে যা লাভ হয় তাই দিয়ে সে ইয়াবা সেবন করে।
এদিকে গোয়েন্দা সূত্রমতে জানা যায়, এভাবে শহরের বাজারঘাটার পূর্ব রাখাইনপাড়া, পশ্চিম রাখাইন পাড়া, বৈদ্যঘোনার মোড়, পাহাড়তলীর ইসলামপুর খেলার মাঠ, কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল নুর হোটেল, কলাতলীর মোড়, সুগন্ধা পয়েন্ট, সী ইন পয়েন্ট, হোটেল সীগার্লের সামনে, লাবনী পয়েন্ট, জিয়া গেষ্ট ইন,কটেজ জোন, হলিডের মোড়, বাহারছড়ার গনস্বাস্থ্যর মোড়, গাড়ির মাঠের কবরস্থান রোড়, সমিতি বাজার স্কুলের পেছনের গলি সহ আরো ১০/১২ টি স্পটে প্রকাশ্যে ইয়াবা সহ অন্যান্য মাদক বিক্রি করা হয়। এই সিন্ডিকেটে প্রায় দুই শতাধিক ছোট বড় মাদক ব্যবসায়ী ও মাদক সেবী জড়িত।
কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র (ভারপ্রাপ্ত) মাহাবুবুর রহমান চৌধুরী বলেন, শহরের রাখাইন পাড়ায় শুধু হাক ডাক করে ইয়াবা বিক্রি নয় রীতিমত সেখানে মাদকের হাট বসে। একদিকে চলে বিকিকিনি অন্যদিকে রাস্তায় বসে সেবন। বিষয়টি অনেকবার আইনশৃঙ্খলা মিটিংয়ে উপস্থাপন করা হয়েছে। দুই একদিন সংশ্লিষ্ঠরা নড়েচড়ে বসে । এরপর আগের মত।
তিনি আরো বলেন, ২৪ ঘন্টায় শহরের বড় বাজারের পূর্ব ও পশ্চিম রাখাইন পাড়া, টেকপাড়ার হিন্দু পাড়া ও হাঙ্গর পাড়া ইয়াবার হাট বসে।
এবিষয়ে কক্সবাজার সদর থানার ওসি (অপারেশন) মাঈন উদ্দিন বলেন, শহরের অনেকগুলো প্রকাশ্যে ইয়াবা বিক্রি করা হয় এটি সত্য। অনেক স্পটে আমরা অতীতে অভিযান করেছি। তবে মাদক অভিযানকালে মাদক পাওয়া না গেলে আমাদের করার কিছু থাকে না।
তিনি আরো বলেন, দেখুন ইয়াবা দেখতে অনেকটা হিস্টাসিন ট্যাবলটের মত। খুচরা বিক্রেতাদের কাছে সর্বোচ্চ ২০/২৫ টি ইয়াবা একসাথে থাকে। তারা পুলিশের আগমন টের পেলেই সেই ইয়াবাগুলো দুরে ছুড়ে দেয়। তারপরও আমরা ২৭ ডিসেম্বর হেঁকে ইয়াবা বিক্রিকালে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে সাজা প্রদান করেছি।
তিনি আরো বলেন, ইয়াবা রোধ করতে হলে সমাজের গনমান্য ব্যক্তিদের এগিয়ে আসতে হবে। ইয়াবা ব্যবসায়ীদের সম্পর্কে তথ্য দিয়ে পুলিশকে সহযোগীতা করতে হবে। এছাড়া অভিভাবক ও এলাকাবাসীকে সচেতন হতে হবে।
র‌্যাব ৭ কক্সবাজার ক্যাম্প কমান্ডার মেজর রুহুল আমিন বলেন, প্রকাশ্যে ইয়াবা বিক্রির সংবাদের তথ্যের ভিত্তিতে আমরা ২৫ ডিসেম্বর পূর্ব রাখাইন পাড়ায় অভিযান চালাই । অভিযান খুচরা ইয়াবা বিক্রেতা আক্তার হোসেন ও ইয়াবা মজুদ কারী লাছিংফ্রু রাখাইনকে নগদ ২১ হাজার টাকা ও ৫ শত ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার করে মামলা দায়ের করি।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট (এডিএম) খালেদ মাহমুদ বলেন, ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে প্রায়ই সময় ইয়াবাসেবী ও খুচরা ইয়াবা বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হয়। আমরা গেল বছর কমপক্ষে ৩০/৪০জনকে ওই অপরাধে কমপক্ষে ১ মাসের সাজা প্রদান করেছি।
তবে তিনি আরো বলেন, শুধু আইনের প্রয়োগ করে সমাজ থেকে মাদক নিমূর্ল করা সম্ভব নয়। এরজন্য দরকার জনসচেতনতা।

পাঠকের মতামত: